সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৮ অপরাহ্ন
বাংলা নিউজডে ডেস্ক রিপোর্ট : বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে ভারতীয় জেলেদের ছাড়িয়ে নিতে এসে বিজিবির গু’লিতে নি’হত হয়েছিলেন এক ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের এক জওয়ান। সেই ঘটনায় বিজিবি’র ডিআইজি, রাজশাহী অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদকে বরখাস্ত এবং কোর্ট মার্শালের মুখোমুখি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছিলো ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ।
The Asian Age এর খবরেও বলা হচ্ছে— ‘BSF jawan killing: 2 BGB officers transferred, court martial proceedings initiated.’
এতবড় একটা ভয়ংকর খবর ভারতের পত্রপত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে! তাই আমাদের সরকারকে স্পষ্ট করে এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করতে হবে।আর এটা যদি মিথ্যা হয়, তাহলে আমাদের সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে ভারতীয় অপপ্রচারের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে দিল্লির কাছে কৈফিয়ৎ চাইতে হবে। অন্যদিকে ভারতের এই সংবাদ যদি আসলেই সত্য হয়,
তাহলে সরকারকে অবশ্যই দেশবাসীর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। দেশরক্ষার প্রতিদানস্বরুপ বিজিবির দেশপ্রমিক কমর্কতারা কেন শাস্তির মুখোমুখি হবে? দেশপ্রেম কেন শাস্তির কারন হবে? নিজেদের আত্মরক্ষার অধিকার কেন আমাদের সেনাসদস্য কিংবা সীমান্তরক্ষীদের থাকবে না?
নিজের দেশরক্ষার চাইতে সরকারের ক্ষমতা রক্ষা কেন এতটা বেশী গুরুত্বপূর্ণ হবে? সীমান্তরক্ষীদের নিজেদেরকে রক্ষারই যদি কোন অধিকার না থাকে, তাহলে তারা দেশের সীমান্ত কিভাবে রক্ষা করবে? আর সীমান্ত রক্ষার অধিকার না থাকলে, দেশ রক্ষা কিভাবে করবে?
দেশের সীমান্ত রক্ষা করতে গিয়ে বিজিবির দেশপ্রমিক বীর অফিসাররা এমন কি অপরাধ করেছেন, যার জন্য তাদের বিরুদ্ধে কোর্টমার্শাল হবার মত প্রসিডিং নিতে হলো? একথার সদুত্তর অবশ্যই সরকারকে দিতে হবে। অামাদের দেশের অভ্যন্তরে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে আমাদের নদীতে এসে মাছ চুরি করে নিয়ে যাবে!
আর আমাদের বিজিবি বাধা দিলে তারা গুলি করবে! তারপরও আমাদের বিজিবি’র নিজেদেরকে রক্ষা করার কোন অধিকার থাকবে না- এটা কোন রামরাজত্বের দাসখত? দেশপ্রেম দেখালে কোর্টমার্শালে বিচার হবে, বদলী করে শাস্তি দিবে- স্বাধীন সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রের এ কেমন অদ্ভুত নিয়তি!
তবে এ খবরটি মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট বলে দাবি করেছেন খোদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বাংলা’কে বলেন, ‘আমি স্বপদে সসম্মানে চাকরিতে বহাল আছি। আমাকে বরখাস্ত করা হয়নি। আমাকে কোনো বিচারের মুখোমুখিও হতে হয়নি। আমাকে নিয়ে এ বাংলায়-ওপার বাংলায় অপপ্রচার চলছে।
আপনারা দয়া করে এসব অপপ্রচার করবেন না। এসব অপপ্রচার কেউ বিশ্বাস করে গুজব ছড়াবেন না।’ গত ১৭ অক্টোবর সীমান্তরেখা অতিক্রম করে প্রজনন মৌসুমে ইলিশ মাছ ধরতে ভারতীয় ৪ জেলে বাংলাদেশের সীমানায় অবৈধভাবে ঢুকে পড়ে। বিজিবি ও মৎস্য কর্মকর্তাদের যৌথ অভিযানে চারজন জেলেকে আ’টক করা হয়।
পরে বিএসএফ তিন জেলেকে জোর করে ছিনিয়ে নেয়। অপর জেলে প্রণব মন্ডলকে ছিনিয়ে নিতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে গু’লি ছুঁড়ে বিএসএফ। আত্মরক্ষার্থে বিজিবিও পাল্টা গু’লি চালায়। এতে বিএসএফ সদস্য বিজয় ভান সিং নি’হত হন।
এরপর, রাজশাহী বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্ণেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দীন মাহমুদ সংবাদ সম্মেলন করে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ডেকে নিয়ে এসে কাছে আনার পর গু’লি করে তাদের মেরে ফেলবো-একটা বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক অবনতি করবো, এমনটা হতে পারেনা।
আমরা তাদের বলেছি, জাতিগতভাবে আমরা মদ্যপ নই এবং আমরা মানসিকভাবেও সবাই সুস্থ। একটা বাহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক অবনত করার মত কোন ঘটনাও ঘটেনি।’ তার এই বক্তব্যটি ভাইরাল হয়ে যায়। অনেকেই তাকে ‘জাতীয় বীর’ হিসেবে উল্লেখ করতে থাকেন।
ওই ঘটনার পর গতকাল সোমবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এর খবরে বলা হয়, রাজশাহী অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদকে বরখাস্ত এবং কোর্ট মার্শালের মুখোমুখি করা হচ্ছে।
ভারতীয় গণমাধ্যমের ওই খবরের প্রতিক্রিয়ায় ৩ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস জিয়াউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আমি কোর্ট মার্শালের মুখোমুখি হচ্ছি না। আমি স্বপদে বহাল আছি। দয়া করে আপনারা এসব অপপ্রচার ছড়াবেন না।
ভারতীয় বাহিনীর কোন কর্মকর্তা কী বললেন, তা কোন ভারতীয় মিডিয়া লিখলো, তা আপনারা দেশে বসে লিখে দিচ্ছেন। সামাজিক মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন। আমরা দেশে আছি, আমাদের সঙ্গে যোগাযোগও করছেন না। এটা দুঃখজনক। কেউ এসব বিশ্বাস করে গুজব ছড়াবেন না।’