সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৬ অপরাহ্ন
বাংলা নিউজডে আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গণহত্যা ঘটেনি, দাবি মিয়ানমারের; রোহিঙ্গাদের পরিকল্পিত খুন-ধর্ষণ-আগুনই গণহত্যার প্রমাণ, আন্তর্জাতিক আদালতকে গাম্বিয়া।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে শুনানির শেষ দিনে নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছে মিয়ানমার। তাদের আইনজীবীরা গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে এ মামলার বিচারে আন্তর্জাতিক আদালতের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। গাম্বিয়ার করা এই মামলা খারিজের দাবি জানিয়েছেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি। শুনানি শেষে বিচারক প্যানেল জানিয়েছেন দ্রুতই এই মামলার সিদ্ধান্ত দেয়া হবে। তবে, নির্দিষ্ট কোনো তারিখ ঘোষণা করা হয়নি।
শুনানিতে সু চি বলেন, তিনি মিয়ানমারে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছেন। আইসিজের কাছে মিয়ানমার এমন রায় প্রত্যাশা করে, যা মিয়ানমারে ঐক্য গড়তে সহায়ক হবে। তিনি বলেন, ‘২০১৬-১৭ সালের মতো জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত আবার শুরু হোক, আমরা তা চাই না।’ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের মতো মিয়ানমারেও সামরিক আদালতে সামরিক সদস্যদের বিচারব্যবস্থা চালু আছে উল্লেখ করে সু চি বলেন, সামরিক বিচারব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানোর সুযোগ না দিয়ে তা আন্তর্জাতিকীকরণ করা উচিত নয়।
শুনানিতে মিয়ানমারের আইনজীবীরা দাবি করেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ ছাড়া অন্য কেউ এই মামলা করতে পারে না। আইসিজে সে কারণে এই মামলা নিষ্পত্তির এখতিয়ার রাখে না। তারা আরও দাবি করেন, রাখাইনে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নির্মূলেই অভিযান চালানো হয়েছিলো, গণহত্যার উদ্দেশ্যে নয়। এছাড়া রাষ্ট্রের সর্বস্তর থেকে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য বিষয়ে গাম্বিয়ার তোলা অভিযোগ সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন আইনজীবীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ছড়িয়েছে, তার দায় ব্যক্তির, মিয়ানমার রাষ্ট্রের নয়।
এছাড়া, সেনাবাহিনীর অভিযানে কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকলে, অপরাধ সংঘটনের স্থান হিসেবে তার বিচার মিয়ানমারেই হওয়া উচিত বলে যুক্তি দেখান মিয়ানমারের আইনজীবীরা।
মিয়ানমারের আইনজীবী ক্রিস্টোফার স্টকার বলেন, মামলার জন্য গাম্বিয়াকে কে বা কারা অর্থায়ন করছে দেশটির আইনজীবীরা তা বলেননি। গাম্বিয়া নিজের অর্থে মামলা করছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। ওআইসির সিদ্ধান্তেই এই মামলা হচ্ছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ, তাই জেনোসাইড কনভেনশন অনুযায়ী, গাম্বিয়া বা অন্য কোনো দেশ এ মামলা করতে পারে না। অন্তবর্তী আদেশ দিলে তা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনসহ এই ইস্যুতে চলমান কূটনৈতিক-রাজনৈতিকসহ নানা কার্যক্রম ব্যাহত হবে।
শুনানি শেষে আইসিজের প্রেসিডেন্ট ইউসুফ যত দ্রুত সম্ভব উন্মুক্ত আদালতে রায় দেওয়া হবে বলে জানান। তিনি আরো জানান, রায়ের তারিখ যথাযথ প্রক্রিয়ায় জানানো হবে।
এর আগে, ‘জেনেভা কনভেনশনের’ অধীন পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ার করা মামলায় বৃহস্পতিবার শেষ দিনের মতো শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সময় সকালে গাম্বিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে দেশটির আইনমন্ত্রী আবু বকর তামবাদু রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আইসিজের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি আদালতে ছয়টি অন্তর্বর্তী নির্দেশনার আবেদন করেন। এর মধ্যে রাখাইনে সেনা কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ এবং রোহিঙ্গা বন্দিশিবির বন্ধ, রাজ্যটিতে নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন অন্যতম।
নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের ওই আদালতে আগের দিন মিয়ানমারের দেয়া বক্তব্যকে ‘বিভ্রান্তিকর’ বলে অভিহিত করেন গাম্বিয়ার আইনজীবীরা।তারা বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা অস্বীকার না করার মধ্য দিয়েই মিয়ানমার বুঝিয়ে দিয়েছে তারা গণহত্যায় জড়িত। কাজেই তাদের শাস্তির মুখোমুখি হওয়া উচিত। এছাড়া জড়িতদের বিচারে মিয়ানমারের আশ্বাসে আস্থা রাখা যায় না। সূত্র : ডিবিসি নিউজ
প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা – banglanewsday@gmail.com