সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৪ অপরাহ্ন
বাংলা নিউজডে ডেস্ক : বিতর্কের মুখে রাজাকারের তালিকা স্থগিতের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, যাচাই-বাছাই ছাড়াই তালিকাটি প্রকাশ করা হয়েছিল। এ-সংক্রান্ত দলিলপত্র বিকৃতির (টেম্পারিং) বিষয়টি বিবেচনায় নেননি বলে হোঁচট খেতে হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রকাশিত রাজাকারের প্রথম তালিকায় নানা অসঙ্গতির অভিযোগ উঠেছে। এতে এমন সব ব্যক্তির নাম এসেছে, যারা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন, লড়াই করেছেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে। কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধে সংগঠকের ভূমিকা পালন করেছেন। এমনকি শহীদ পরিবারের সদস্যদের নামও রয়েছে তালিকায়। অথচ এতে নেই চিহ্নিত অনেক রাজাকারের নাম। এসব কারণে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
সদ্যঘোষিত এ তালিকায় রয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি গোলাম আরিফ টিপুসহ অন্তত ৯ জন মুক্তিযোদ্ধার নাম। তালিকায় বরিশালের ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. তপন কুমার চক্রবর্তী ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া তার বাবা অ্যাড. সুধীর কুমার চক্রবর্তীর স্ত্রী ভাতাপ্রাপ্ত উষা রানী চক্রবর্তী এবং যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত মিহির লাল দত্তের নামও রয়েছে।
অন্যরা হলেন অ্যাডভোকেট মহসিন আলী, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম, তৎকালীন জেলা প্রশাসক আব্দুর রউফ ও পুলিশ কর্মকর্তা এসএস আবু তালেব। যদিও এই তালিকার মন্তব্যের ঘরে লেখা রয়েছে তাদের অব্যাহতি দিতে জেলা কমিটি আবেদন করেছিল। এর বাইরে আর কোনো তথ্য নেই। সেই হিসেবে ধরা যায়, এই পাঁচ ব্যক্তি রাজাকার বা স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন না বলেই তাদের অব্যাহতি দিতে আবেদন করা হয়েছিল।
এ ছাড়া তালিকায় বঙ্গবন্ধুর সহপাঠী বরগুনার মরহুম মো. মজিবুল হকের নামও এসেছে। রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম আসার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল সমালোচনা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘১৯৭১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতকৃত রাজাকারদের তালিকা মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে হুবহু প্রকাশ করা হয়েছে। এখানে কোনো ভুলত্রুটি আছে কি না, সেটা আমরা জানি না। তালিকা প্রকাশের পর অনেকে ফোন করে বলছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নামও তালিকায় রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘কোনো ব্যক্তির নামের সঙ্গে অন্য কারোর নামের মিলের কারণে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে থাকতে পারে। তারপরও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এলে, সেগুলো বিবেচনা করা হবে।’
উল্লেখ্য, রোববার প্রথম ধাপে ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। যাচাই-বাছাই করে ধাপে ধাপে আরও তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা রাজাকারের তালিকাটি প্রত্যাহার করেছি। আগামী বছরের ২৬ মার্চ আমরা পরিপূর্ণ তালিকা প্রকাশের জন্য কাজ করব। তালিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে যেসব এলাকা বাদ গেছে, সেসব এলাকা বিবেচনায় নেয়া হবে। প্রকাশিত তালিকাটি আংশিক ছিল।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যাচাই-বাছাই ছাড়াই তালিকাটি প্রকাশ করেছিলাম। সেখানে যেহেতু ভুল ধরা পড়েছে, সেজন্য এটি প্রত্যাহার করা হলো।’
‘কোন পরিস্থিতিতে রাজাকারের তালিকাটি যাচাই-ছাড়াই প্রকাশ করতে হলো’-জানতে চাইলে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘যারা এটা রেখে গেছে, তারা হয়তো সঠিকটাই রেখে গেছে-এই আত্মবিশ্বাসে। মাঝখানে যে অন্যরা ক্ষমতায় ছিল, এর মধ্যে যে টেম্পারিং হতে পারে, এটা আমাদের বিবেচনায় ছিল না।
তিনি আরও বলেন, এটা আমাদের নির্বুদ্ধিতা। বোকামি হলো এটা যে, তারা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় ছিল, তারা যে ম্যানুপুলেট করতে পারে, টেম্পারিং করতে পারে, সেটা বিবেচনায় নেইনি বলেই আমাদের এই হোঁচট খেতে হয়েছে।’
রাজাকারের তালিকায় নাম নেই আলোচিত সাজাপ্রাপ্তদের
রাজাকারের তালিকায় ট্রাইব্যুনালের কৌঁসুলি গোলাম আরিফ!
আমেরিকা, বাংলাদেশ এবং বিশ্বের সর্বশেষ খবরের জন্য বাংলা নিউজডের ওয়েবসাইটে আসুন এবং আমাদের Bangla Newsday ফেসবুক পৃষ্ঠাটি সাবস্ক্রাইব করুন। প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা – banglanewsday@gmail.com