শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৬ অপরাহ্ন
বাংলা নিউজডে আন্তর্জাতিক ডেস্ক :আজ সোমবার বহুল আলোচিত নাগরিকত্ব বিল তুমুল বিতর্কের মধ্যে ভারতের লোক’সভায় পাস হয়েছে। এই আইন সংশোধনের ফলে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে শরণার্থী হিসেবে যাওয়া অমুসলিমদের ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে।ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বিলটিকে ‘মুসলিমবিরোধী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৯ ঘিরে উত্তপ্ত হয়েছে ভারতের উত্তর পূর্বের রাজ্য’গুলো। সোমবার সকাল থেকেই আসামসহ একাধিক রাজ্যে এই বিলের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে পড়েছেন বিক্ষোভকারীর। আসামে প্রতিবাদের নেতৃত্বে ‘অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন’ বা আ’সু। তাদের দাবি, এই বিলটি আসাম চুক্তির অবমাননা। ত্রিপুরার রাজধানী অগরতলাতেও চলছে প্রতিবাদী কার্যসূচি। দুই রাজ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত বাহিনী।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রি’সভার ছাড়পত্র পাওয়ার পর নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সোমবার লোক’সভায় উঠলে তা নিয়ে প্রবল আপত্তি জানান মুসলমান পার্লামেন্ট সদস্যরা। বিলের একাধিক অংশ নিয়ে আপত্তি তোলে কংগ্রেসসহ বিরোধীরাও।শেষে ভোটাভুটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে বিলটি পাস হয় বলে ভারতের গণমাধ্যম জানিয়েছে। বিলটির পক্ষে ভোট পড়ে ৩১১টি, বিপক্ষে ভোট দেন ৮০ জন।
১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধনে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে গিয়ে ভারতে শরণার্থী হওয়া হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ ও পার্সি সম্প্রদায়ের শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা রয়েছে বিলে। উল্লেখ্য, ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে বলা ছিল, অন্তত ১১ বছর ভারতে থাকলে তবেই কোনো ব্যক্তিকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। নতুন বিলে ওই সময় কমিয়ে ৫ বছর করা হয়েছে।
বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, কেন এই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে মুসলিমদের নাম নেই।উল্লেখ্য, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল-এ বাইরে থেকে আসা মুসলিমদের কথা বলা হয়নি।কেন্দ্রীয় সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে বেছে বেছে অমুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের নাগরিকত্ব দিচ্ছে বলে অভিযোগ তোলে তারা।
অল ইন্ডিয়া মজলিসে ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের নেতা আসাদুদ্দিন ওয়াইসি বিলের উপর আলোচনায় বলেন, এর মধ্য দিয়ে ভারতের জনগণের মধ্যে বিভক্তি আনা হচ্ছে। আসাদুদ্দিন ওয়াইসি বলেন, এই বিল ভারতের মুসলমানদের রাষ্ট্রহীন করার একটি চক্রান্তই শুধু নয়, এটা জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও বড় হুমকি হিসেবে কাজ করবে।বক্তৃতার এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ ওয়াইসি বিলের একটি কপি টুকরা টুকরা করে ছিঁড়ে ফেলেন।
আসামের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেস নেতা তরুণ গগৈ বলেন, এটা তার রাজ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দেখা দেবে। কারণ তার রাজ্যের পাশেই রয়েছে বাংলাদেশ।মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মিজোরামেও কেন্দ্রের এই বিলটির বিরুদ্ধে সুর চড়ছে। মেঘালয়ের রাজনৈতিক দল এনএনপি থেকে মিজোরামের এমএনএফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে বিজপির বা হিমন্ত বিশ্বশর্মার মস্তিস্কপ্রসূত ‘নর্থইস্ট ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স’ বা ‘নেডা’র শরিক হলেও নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটিকে কোনোভাবেই সমর্থন করবে না তারা।
কংগ্রেসের সমালোচনা করে বিজেপির এই নেতা অমিত শাহ বলেন, মুসলমানদের নাগরিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা পুরোপুরি ভুল। ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব বিলে সংশোধনী করা হয়নি। “আজ এই বিলের প্রয়োজন পড়ল কেন? স্বাধীনতার পর কংগ্রেস ধর্মের নিরিখে দেশভাগ না করলে, আজ এই বিলের প্রয়োজনই ছিল না। আমরা নই, ধর্মের নিরিখে দেশভাগ করেছিল কংগ্রেসই।”
এদিক, বিলটি লোকসভায় পাসের পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর প্রশংসা করে টুইট করেছেন।তিনি লিখেছেন, অমিত শাহ বিরোধীদের কথার জবাব যেভাবে যুক্তি দিয়ে দেখিয়েছেন, যেভাবে আইনটি সংশোধনের যৌক্তিকতা তুলে ধরেছেন, তা প্রশংসনীয়।
এ বিল আগেও একবার পার্লামেন্টে পেশ করা হলেও আসামসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে সেটি পাস করানো যায়নি।আইনে পরিণত হতে হলে বিলটি এখন সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার অনুমোদন পেতে হবে।
প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা, ভ্রমণ, গল্প-আড্ডা, আনন্দ-বেদনা, অনুভূতি, স্বদেশের স্মৃতিচারণ, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক লেখা পাঠাতে পারেন। ছবিসহ লেখা পাঠানোর ঠিকানা – banglanewsday@gmail.com