মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৮ পূর্বাহ্ন
পাবনার ফরিদপুর উপজেলায় ১২ কোটি ৩৬ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়ক ছয় মাসের মধ্যেই ধসে পড়েছে। ২০১৬ সালে নির্মাণকাজ শুরু হওয়া এ সড়ক গত জুন মাসে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এর ছয় মাস পার না হতেই গত সপ্তাহে সড়কের প্রায় দুই কিলোমিটার অংশে কার্পেটিংসহ বেশির ভাগ জায়গা ধসে পড়ে। এতে ওই সড়কে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। তবে ঝুঁকি নিয়ে অটোরিকশাসহ দুই চাকার কিছু গাড়ি চলাচল করছে। এ ছাড়া সড়কের আরো কিছু অংশে ফাটল ধরেছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে সড়কের এসব অংশও যেকোনো সময় ধসে পড়বে। উপজেলা প্রকৌশল অফিস জানিয়েছে, ঠিকাদারের নিজস্ব অর্থায়নে সড়কটি পুনরায় মেরামত করতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, উপজেলা প্রকৌশল অফিস ২০১৬-১৭ অর্থবছরে উপজেলার পার ফরিদপুর থেকে বিএলবাড়ী গ্রাম পর্যন্ত ছয় হাজার ৩৯০ মিটার সড়ক নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। প্রথম পর্যায়ে নির্মাণকাজের ব্যয় ধরা হয় ১০ কোটি ৬২ লাখ টাকা। কাজটি পান রাজশাহীর ঠিকাদার আব্দুল আওয়াল। কিন্তু তিনি কাজটি নিজে না করে বিক্রি করে দেন পাবনার ঠিকাদার শাহনেওয়াজ আলীর কাছে। ২০১৬ সালের শেষের দিকে কাজটি শুরু হয়।
এরপর ২০১৮ সালের শুরুর দিকে ঠিকাদার শাহনেওয়াজ ৫০ শতাংশ বিল তুলে নিয়ে কাজ বন্ধ করে দেন। কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকার পর উপজেলা প্রকৌশল অফিস ঠিকাদার আব্দুল আওয়ালকে কাজ শেষ করার জন্য চাপ দেন। পরে আব্দুল আওয়াল নিজেই কাজ শুরু করেন। এ সময় ঠিকাদারের আবেদনের পরিপ্র্রেক্ষিতে উপজেলা প্রকৌশল অফিস কাজটির জন্য বরাদ্দকৃত ১০ কোটি ৬২ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ কোটি ৩৬ হাজার ১৬৫ টাকা নির্ধারণ করেন। এরপর এ বছর জুন মাসে সড়ক নির্মাণকাজ শেষ হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, নির্মাণকাজ চলাকালে সড়কের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরে বসে যায়। সে সময় ঠিকাদার দায়সারাভাবে ওই স্থানগুলো সংস্কার করেন।
গত শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছয় কিলোমিটার সড়কের প্রায় তিন কিলোমিটার দেওভোগ গ্রামের খালের এক পাশ দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। এ অংশ বালু দিয়ে ভরাট করে সামান্য মাটিও ব্যবহার করা হয়। সড়ক ঠেকাতে খালের নিচ থেকে কার্পেটিং পর্যন্ত আরসিসি ব্লক দেওয়া হয়েছে। এসব ব্লক বসানো হয়েছে এলোমেলো ও দায়সারাভাবে। ফলে বৃষ্টিতে ব্লকের জোড়ার স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ করে সড়কের ভেতরের বালু ধুয়ে যেতে থাকে। এ ছাড়া ব্লকের মূল ভিত্তিতে খালের মধ্যে গাইডওয়াল নির্মাণের কথা থাকলেও পানিপ্রবাহের কারণে অনেক স্থানেই তা নির্মাণ সম্ভব হয়নি। আর কিছু জায়গায় গাইডওয়াল নির্মাণ করা হলেও শুরু থেকেই তা হেলে পড়েছিল। এ অবস্থায় গাইডওয়াল এবং ব্লকসহ সড়ক ধসে পড়ে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়ক নির্মাণে ব্লক ও গাইডওয়াল নির্মাণে অনিয়মের কারণেই সড়কের এই বেহাল হয়েছে।
দেওভোগ গ্রামের স্কুল শিক্ষক নুরুজ্জামান বলেন, ‘সড়ক নির্মাণকাজের শুরু থেকেই অনিয়ম লক্ষ করা যায়। নির্মাণকাজ পরিদর্শনে এলে প্রকৌশল অফিসের কর্মকর্তাদের অনিয়মের বিষয়ে জানানো হয়। কিন্তু কাজের মানের তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। ফলে কিছুদিন যেতেই সড়ক ভেঙে গেছে।’বিএলবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা সড়ক ছয় মাস পার না হতেই ধসে পড়ায় আমরা খুবই হতাশ। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। দেখি উনারা কী করেন।’
সড়ক নির্মাণকাজের তদারকি কর্মকর্তা ফরিদপুর উপজেলা প্রকৌশল অফিসের সদ্যোবিদায়ী উপসহকারী প্রকৌশলী ইসলাম আলী বলেন, ‘সড়ক নির্মাণকাজের মান খুব ভালো ছিল। কিন্তু এ বছর বন্যার পানি চলে আসার কারণে শেষ মুহূর্তের কিছু কাজ তড়িঘড়ি করে করা হয়। এতে সড়ক ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে সমস্যা হবে না। ঠিকাদারের পর্যাপ্ত টাকা সিকিউরিটি হিসেবে অফিসে জমা আছে। তাঁর নিজ দায়িত্বেই পুনরায় সড়ক মেরামত করে দিতে হবে।’
সূত্র: কালের কণ্ঠ ১৮ নভেম্বর, ২০১৯